রামায়ণে পড়েছি পুষ্পক রথের কথা , যা আকাশে উড়তে পারে । দশরথ নাকি দশদিকে অর্থাৎ চারদিক এবং চারদিকের কোণগুলি সমেত উপরের আকাশে এবং নীচের দিকেও রথ চালাতে পারতেন বলেই তাঁর নাম দশরথ । বিশ্বাস হতোনা ।
মনে হত আমাদের প্রাচীন ভারত যদি বিমান নির্মাণের পদ্ধতি আবিষ্কার করে থাকে তবে তার প্রমাণ কই ? প্রাচীন ভারতীয় পুঁথিপত্রেও তো এসম্পর্কিত কোনও রিসার্চপেপার কথা আছে বলে শুনিনি । কিম্বা আবিষ্কারকের নাম , আবিষ্কারের বর্ণনা কিছুই নেই । তবে হতে পারে এসব কল্পনা । জুল ভার্নের লেখায় তো ডুবোজাহাজের কথা পাওয়া যায় । কিন্তু জুল ভার্নের সময়ে ডুবোজাহাজ ছিলনা । সবটাই লেখকের কল্পনা । হতে পারে আমাদের রামায়ণে বর্ণীত পুষ্পক রথ কিম্বা আসামে দন্তবক্রের সাথে যুদ্ধ জেতার পর শ্রীকৃষ্ণের আকাশপথে প্রত্যাবর্তন এসবই নিছক কল্পনা ।
কিন্তু চিন্তাভাবনাগুলো উল্টে পাল্টে গেল একটি সদ্যপ্রকাশিত ঘটনার কথা জেনে । আফগানিস্তানের ( যা প্রাচীন ভারতের গান্ধার রাজ্য ) একটি গুহায় অন্তত পাঁচ হাজার বছরের পুরানো একটি বিমানের সন্ধান পাওয়া গেছে ।
রাশিয়ার ফরেন ইন্টেলিজেন্স দপ্তরের দাবী এই বিমানের প্রাচীনত্ব মহাভারতের কালের এবং এই বিমানের ইঞ্জিন চলতে শুরু করলে বিমানটি থেকে বিভিন্ন রকম অদ্ভুত আলো নির্গত হয় ।
খবরে আরও প্রকাশ হয়েছে যে মিসরীয় সভ্যতার মধ্যে বিমানের চিত্র দেখা যায় ।
খবরে আরও প্রকাশ হয়েছে যে চীন সরকার তিব্বত থেকে কিছু প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি উদ্ধার করেছে যেখানে ইন্টারস্টেলর স্পেসশিপ নির্মাণের পদ্ধতি বর্ণীত আছে । এই পুঁথি চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে এর অর্থ উদ্ধারের জন্যে ।
জানিনা এসবের সত্যতা কতটা । তবে এসব যে উড়িয়ে দেবার মতো ঘটনা নয় তা বেশ বুঝতে পারছি ।
প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রে উড়োজাহাজের গঠনশৈলীর সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া গেছে ।
প্রাচীন ভারতীয় রাজা অশোক ৯জন বিজ্ঞানীর একটি গুপ্ত সংঘটন চালু করেছিলেন। ধারনা করা হয় তারা প্রত্যেকেই একটি করে বই লেখেন। যার একটি হল সিক্রেট অফ গ্যাভিটেশন।এই বইটির কথা ইতিহাসবিদ গন জানতেন এবং ধারনা করা হত বইটি খুব সম্ভবত তিব্বতের কোথাও আছে। যাই হোক কয়েক বছর আগে চীন সরকার কিছু প্রাচীন সংস্কৃত ডকুমেন্ট আবিষ্কার করে তিব্বতের লাসা থেকে।এবং এগুলো অনুবাদের জন্য পাঠানো হয় চণ্ডীগড় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ রুথ রেয়নার কাছে। যিনি জানান এই ডকুমেন্টগুলোতে স্পেশসীপ কিভাবে নির্মাণ করতে হবে তা নিয়ে তথ্য আছে! চীন সরকার এটাকে গুরুত্বের সাথে নিলেও ভারত তখনও তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। পরে চীন দাবি করে তারা এই ডকুমেন্টগুলো তাদের স্পেস প্রোগাম কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ডকুমেন্টগুলোতে অবশ্য স্পষ্ট কোনও বিবরণ নাই যে প্রাচীন ভারতীয়রা বিমানে/উড্ডয়ন যন্ত্রে করে কোনও গ্রহে বা চাদে গিয়েছিল কিনা বা আকাশেই উড়েছিল কিনা তবে একথা স্পষ্ট আছে যে তারা কোনও মানুষকে গ্রহে বা চাদে পাঠাতে সক্ষম ছিল। এখন যেটা ধারনা করা হয় সম্রাট অশোকের বইটিই চীন আবিষ্কার করেছে। আর যাতে রয়েছে স্পেসসীপ তৈরির নানা কথা।
প্রাচীন ভারতের সম্পূর্ণ ইতিহাস আমরা জানি না। অনেক কিছু নিয়েই আছে বিতর্ক।যদিও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রামের গুরুত্ব অনেক তবে ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিতে এটা নিশ্চিত না রাম ও লক্ষন এর যুদ্ধ মিথ নাকি সত্যি। তবে ইদানীং রাম এর অস্তিত্বের কথার ভাল কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। রামায়ণে একাধিকবার বিমানের কথা আছে পুষ্পক এর কথা আছে যাও একধরনের বিমান। আছে বিমানের আকৃতি ও গঠনের কথা। রামায়ণের বর্ণনায় ডাবল ডেক বিশিষ্ট বৃত্তাকার বিমানগুলোতে আছে গুম্বজ। যা আমাদের ফ্লাইং সসারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এছাড়াও আরও তিন ধরনের বিমানের কথা আছে যার একটির বর্ণনা সিগার সেপড এয়ারশিপ এর সাথে মিলে।
প্রাচীন ভারতীয় আরেক গ্রন্থ সমর সূত্রধারাতে বিমান নির্মাণ,আরোহণ-অবতরণ সহ বিমানের নানা খুঁটিনাটি দিক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। ওখানে বলা আছে হালকা শক্ত ও টেকসই ধাতু দ্বারা তৈরি বিমান দেখতে হবে পাখির মত।এর ভিতর রাখতে হবে হিটিং সিস্টেমসহ পারদ ইঞ্জিন। পারদ উত্তপ্ত হলে বিমান বৃত্তাকার ভাবে উড়তে এবং নামতে পারবে। বিমান তেরচাভাবে পিছনে বা সামনে যেতে সক্ষম।এবং এতে করে মানুষ আকাশে উড়তে পারবে ও স্বর্গীয় দেবতfরা ধরাতে আসতে পারবে। ফ্লাইং সসারের সাথে তাজ্জব মিল! তাই না? ইঞ্জিনের গঠন নিয়েও বিস্তারিত লেখা আছে বইটিতে।তাতে বলা আছে বৃত্তাকার বিমান কাঠামোর ভিতরে সোলার মার্কারি(পারদ) বয়লার সহ মার্কারি ইঞ্জিন বসাতে হবে। চারটি পারদ বিশিষ্ট শক্তিশালী কনটেইনার স্থাপন করতে হবে ভিতরে।যেগুলো সৌর শক্তিতে উত্তপ্ত হয়ে ইঞ্জিন চালু হবে! সোলার প্ল্যান্ট? কত হাজার বছর আগে? খায়সে! ভাল কথা সমর সূত্রধারা কিন্তু বেদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে লেখা। এই লেখার আরও হাজার হাজার বছর পর মার্কারি ইঞ্জিন আবিষ্কার নিয়ে গবেষণা শুরু করে নাসা!
১৮৭৫ সালে ভারতের এক মন্দির থেকে প্রাচীন এক গ্রন্থ পাওয়া যায়। যা রচনা করেছেন সাধু বারতবাজি খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে। বইটি কোনও মৌলিক গ্রন্থ নয় এটি লেখতে তিনি প্রাচীন বেদ ও রামায়ণের সাহায্য নিয়েছিলেন।মজার ব্যাপার হল বইটির নাম বৈমানিক শাস্ত্র। বইটি বিমান নির্মাণ,বিমান অদৃশ্যকরণ,শত্রু বিমান ধ্বংস-করন সহ মোট আটটি অধ্যায়ে সাজানো।বইটিতে তিন ধরনের বিমান(রুকমা,সাকুনা,ত্রিপুর
এর গঠনের কথা উল্লেখ আছে। আছে বিমানের নানা যন্ত্রের বর্ণনা এবং বিমানের জ্বালানির কথাও উল্লেখ আছে।
বই এর বর্ণনামতে একটি বিমান ছিল বৃত্তাকার এবং এগুলো দ্বারা আকাশে উড়া যায়!
বিমানের জ্বালানিতে ব্যবহার করা হত পারদ আবার কখনও হলুদেটে সাদা তরল। খুব সম্ভবত তিনি গ্যাসোলিন এর কথা বলেছেন। উনার বিবরণ দ্বারা বুঝা যায় বিমানগুলোতে কম্বাসচন ইঞ্জিন এবং পালস-জেট ইঞ্জিন দুই ধরনের ইঞ্জিনই ব্যবহার করা হত। যে পালস-জেট ইঞ্জিন নিয়ে হাজার বছর পর নাৎসিরা গবেষণা শুরু করে।তাদের রকেটে ব্যবহার করার জন্য। যেভাবেই হোক হিটলার প্রাচীর ভারতের এই গ্রন্থগুলো সম্পর্কে জানতেন এবং এগুলো সংগ্রহ করার জন্য তার প্রতিনিধিদের ভারতবর্ষে পাঠিয়েছিলেনও।
এছাড়াও রামায়ণ বেদ মহাভারতে নানা স্থানে বিমান(কখনও বা পুষ্পক কখনও বা অগ্নিরথ মূলত সবই এক)এর কথা আছে। তবে পুরাণ নিয়ে আমি নিজে তেমন একটা বিশ্বাসী না তাই এসব নিয়ে কথা বাড়ালাম না। এখন মূল কথা হল বৈমানিক শাস্ত্র ও সমর সূত্রধারার প্রাচীনতা নিয়ে কোনও সন্দেহ না থাকলেও বিমান গঠন এর বর্ণনা ও যেসমস্ত নকশা আকা আছে তার বৈজ্ঞানিক সত্যতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন আছে। বর্ণিত বিমানগুলো কি সত্যিই উড়তে পারত? এগুলো কি নির্মাণ সত্যিই সম্ভব? সব প্রশ্নের উত্তরই সন্দেহের মুখে।বৈমানিক শাস্ত্র নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে।আধুনিক বিমানের গঠনের সাথে বৈমানিক শাস্ত্রে আকা বিমানের গঠনের তেমন একটা মিল নাই। তবে মজার ব্যাপার হল বৈমানিক শাস্ত্র ফলো করে সত্যিই কিন্তু বিমান তৈরি করা হয়েছিল। কবে জানেন? ১৮৯৫ সালে। এবং সেই বিমান মুম্বাই বিচে উড়েছিল ১৫০০ ফিট উপরে। তারপর হয়েছিল ধ্বংস।আবিষ্কারক হল শিবসংকর তেলপদ। একজন ভারতীয়! মাই গড! অবাক হওয়ার মত ব্যাপার,তাই না? রাইট ভাইগন যে তাহলে পথে বসে যায়। কারণ বিমান আবিষ্কারের কৃর্তত্ব দেওয়া আছে তাদের। যারা আবিষ্কার করে ১৯০৩ সালে। কিন্তু মূল সমস্যাটা হল শিবসংকর এর এই বিমান উড়া নিয়ে আছে নানা সন্দেহ। যদিও অনেকেই নিজ চোখে তার বিমান উড়তে দেখেছেন কিন্তু বেশীরভাগই আবার দাবী করেন বিমান একটা তিনি তৈরি করেছিলেন বটে নাম ছিল তার মারুত শক্তি তবে তার এই বিমান উড়তে পারত না। শিবসংকর এর উড়োজাহাজ নিয়ে গবেষণা অবশ্য থেমে গিয়েছিল বারোদার রাজার জন্য। ধারনা করা হয় ব্রিটিশ সরকারের পরোক্ষ নির্দেশে উনাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে ইতিহাসের এইদিকটা থেকে যায় অন্ধকারেই।
পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে যার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব না। এই মডেলগুলোও তেমন। হয়ত প্রাচীনকালে বিমান ছিল হয়ত ছিল না। তবে এই নিদর্শনগুলো আমাদের জন্য রেখে গেছে অনেক প্রশ্ন। আমরা যে ইতিহাস জানি মানবসভ্যতার তা কি ঠিক? নাকি মাঝখানে অনেককিছুই বাদ পড়ে গেছে?
টেলিভিশনের হিস্ট্রি চ্যানেল থেকে নেওয়া এই সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণের ভিডিও নীচে দেওয়া হল : Watch
তাছাড়াও আপনারা এই ভিডিওটি দেখতে পারেনঃ Watch
Courtesy: Ricky Saha
Like us on Facebook: Alokito Manush
<<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>>>>