Wednesday, August 21, 2013

মনসার দ্বাদশ নামের উৎপত্তি



মনসার দ্বাদশ নামের উৎপত্তিঃ
             ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ, দেবী ভাগবত প্রভৃতি গ্রন্থে মনসার লীলা ও চরিত্র কাহিনী বর্ণিত আছে। তা থেকেই দেবীর উক্ত দ্বাদশ নামের উৎপত্তির ইতিহাস পরিজ্ঞাতব্য।
                    জরৎকারু নামে এক কৃশাঙ্গ মুনি ছিলেন। তারই নামানুসারে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই নাকি মনসার নামকরন করেছিলেন জরৎকারু। পরবর্তীকালে ওই মুনির সঙ্গেই সম্পন্ন হয় তার শুভ পরিনয়। এ জন্য তার অন্য নাম জরৎকারুপ্রিয়াআস্তীক নামক এক কুলরক্ষাকারী, জ্ঞানী ও হরিভক্ত পুত্র প্রসব করার পর তিনি প্রসিদ্ধা হন আস্তীকমাতা নামেও। মনসা অতিশয় গৌরবর্ণা এবং স্বর্গ–মর্ত্যাদি সকল লোকের মনোহারিনী। এ জন্য লোকে তাকে বলে জগদগৌরী। তিনি সহস্র বৎসর শিবের আরাধনা করে দিব্যজ্ঞান লাভ এবং শিবের আদেশে সামবেদ অধিগত করেছিলেন এবং তিনি শিবেরই শিষ্যা। এ জন্য তাকে বলা হয় শৈবী। শিবকর্তৃক কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিতা হয়ে পুষ্করতীর্থে গমনপূর্বক মনসা তিন যুগব্যাপী ভক্তিপূর্বক শ্রীহরির ভজনা করে তার দর্শন লাভ করেছিলেন, এ জন্য তিনি বৈষ্ণবী নামেও পরিচিতা। স্বয়ং যোগেশ্বর শিব তাকে অনিমাদি সিদ্ধযোগ দান করেছিলেন, এজন্য তার এক নাম সিদ্ধি যোগিনী। নাগরাজ বাসুকি তার সহোদর ভ্রাতা; এ জন্য মনসা নাগভগিনী। জন্মেজয়ের প্রসিদ্ধ সর্পসত্রে তারই গর্ভজাত পুত্র সুকৌশলে নাগগনের প্রানরক্ষা করেছিলেন। এ উপকারের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নাগগন সকলেই তার নিত্য অনুগত, এ জন্য তাকে বলা হয় নাগেশ্বরী। বিষহরণে সমর্থা বিধায় তার নাম বিষহরী। মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা পরিজ্ঞাত আছেন এবং যোগবিদ্যাতেও সিদ্ধা, এ জন্য তিনি মহাজ্ঞানযুতা বলে স্তুতা।
                                         ------------ স্বামী নির্মলানন্দ (বইঃ মূর্তিপুজা কি ও কেন)

Please like us on facebook: www.facebook.com/alokito.manush.knowledge
    

          

Monday, August 12, 2013


হিন্দুরা প্রায়ই একটি বিষয় নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে থাকে। তা হল মূর্তিপূজা করা কি উচিত নাকি উচিত নয়? এই নিয়ে বিভিন্ন হিন্দু বিশেষজ্ঞ তাদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করেন। এই রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। কাহিনীটি নিচে বর্ণনা দেয়া হলঃ
               শ্রীরামকৃষ্ণের সাথে এক মাস্টারমশাইয়ের পরিচয় হয়েছিল। পরিচয়ের দ্বিতীয় দিনেই মাস্টারমশাই ব্রাম্মসুলভ প্রশ্ন তুলেছিলেন; ঈশ্বরকে যেহেতু নিরাকার বলে বিশ্বাস করি তাই তাকে সাকার মানি কেমন করে? শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, নিরাকারে বিশ্বাস ভাল; কিন্তু সাকারও সত্য। মাস্টার বললেন, তাও যদি হয়, তবু মাটির প্রতিমা তো তিনি নন।
       শ্রীরামকৃষ্ণ বললেন, মাটি কেন গো! চিন্ময়ী প্রতিমা।
       মাস্টারমশাই বললেনঃ আচ্ছা, যারা মাটির প্রতিমা পূজা করে তাদের তো বুঝিয়ে দেয়া উচিত যে, মাটির প্রতিমা ঈশ্বর নয়, আর প্রতিমার সম্মুখে ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে পূজা করা উচিত।
       শ্রীরামকৃষ্ণ (বিরক্ত হয়ে) তোমাদের কলকাতার লোকের ঐ এক। কেবল লেকচার দেয়া, আর বুঝিয়ে দেয়া! আপনাকে কে বোঝায় তার ঠিক নাই! তার জগত তিনি বোঝাবেন। তিনি অন্তর্যামী। যদি ঐ মাটির প্রতিমা পূজা করাতে কিছু ভুল হয়ে থাকে তিনি কি জানেন না তাকেই ডাকা হচ্ছে? তিনি ঐ পূজাতেই সন্তুষ্ট হন। তোমার ওর জন্য মাথা ব্যথা কেন? তুমি নিজের যাতে জ্ঞান হয়, ভক্তি হয়, তার চেষ্টা কর।
            
                             সুতরাং উপরের ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা ঈশ্বরকে যেভাবেই ডাকি ঈশ্বর আমাদের সেভাবেই সাড়া দেন। নিরাকার ঈশ্বর বিশ্বাস ভাল কিন্তু সাকার বিশ্বাস করাতেও দোষ নেই। প্রতিমা পুজার মাধ্যমে আমাদের ভক্তি ও বিশ্বাস শক্ত হয়। অর্থাৎ আপনি সাকার অথবা নিরাকার কিভাবে ঈশ্বরকে ডাকবেন তা একান্ত আপনার ব্যাক্তিগত ইচ্ছা। আপনি যেভাবেই ঈশ্বরকে ডাকুন ঈশ্বর আপনাকে সাড়া দিবেন। এটা নির্ভর করবে আপনার ভক্তি ও বিশ্বাসের উপর। তাই এটা নিয়ে দ্বন্দ্বের কিছু নেই।
                                                                            ------ অর্জুন রুদ্র


<<<<<<<<>>>>>>>>>