Sunday, December 1, 2013

গনেশের চরিত্রবৈভব



গনেশের চরিত্রবৈভবঃ
          গনেশের বীর্যবত্তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, পিতৃমাতৃভক্তি ও গণনায়কতার মহিমা আমরা সকলেই জানি। এখন তার শুদ্ধ চারিত্রিক বৈভবের বিষয়ে কিছু বলা যাক। যুবশক্তির প্রকৃত উৎসই হচ্ছে চরিত্র – মানসিক ধৈর্য ও আত্মসংযম। কুমার গনেশের ভিতরে এ সব কয়টি গুনেরই অপরুপ সমাবেশ। একটি মাত্র দৃষ্টান্ত থেকেই তা সম্যক পরিজ্ঞাত হওয়া যায়।
        প্রথম জীবনে গনেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি দ্বার পরিগ্রহ করবেন না, চিরকুমার থেকে সমগ্র জীবন যাপন করবেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি তপস্যাতেই নিরত হন। কিন্তু তার এই তপস্যায় বাধ সাধেন ধর্মধ্বজের কন্যা তুলশী। সুন্দরী রাজবালা গনেশকেই ভালবেসে ফেলেন একান্তভাবে। তাকে চান বিবাহ করতে। কিন্তু ধৈর্যশীল ও আত্মসংযমনিষ্ঠ গনেশ যুবা হলেও যুবতির প্রনয়গুঞ্জনে তথা তার আত্মদানের প্রতিজ্ঞায় বিচলিত নহেন বিন্দুমাত্রও। তিনি দৃঢ়তা সহকারে তুলসীকে প্রত্যাখ্যান করেন। গোপন প্রনয়ের সমাজনিন্দিত দুর্বলতা তাকে আদৌ স্পর্শ করতে পারে না।
       প্রনয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে একটা না একটা অঘটন ঘটেই থাকে। কাম প্রতিহত হলেই আসে ক্রোধ। ক্রোধের পরিনাম বিপর্যয় অথবা বিনাশ। তুলসী যখন দেখেন নিজের যৌবন ও রূপের মদিরায় তপোনিষ্ঠ গনেশকে আকৃষ্ট করা গেল না, তখনই তার নৈরাশ্যময় জীবনে উপচিত হয় দারুন ক্ষোভ ও ক্রোধ। প্রগলভযৌবনা প্রতিহিংসার বশে বাঞ্ছিত প্রনয়ীকে অভিশাপ দিয়েই বসেন। গনেশের প্রতিজ্ঞা ছিল, তিনি বিবাহ করবেন না, কিন্তু তুলসীর অভিসম্পাত – ‘তুমি বিবাহ করতে বাধ্য হবে’। গণেশও ক্ষমা করতে পারেন না এ অন্যায় ব্যবহার। তিনি তুলসীকে প্রত্যভিসম্পাত করেন – ‘তুমি যেরুপ কামাতুরা, তাতে তুমি দেবভোগ্যা  না হয়ে অসুরভোগ্যা হবে।’ উভয়ের অভিশাপই সত্য হয়েছিল। পরবর্তীকালে গনেশ পুষ্টি নাম্নী এক দেববালার পাণিগ্রহন করেছিলেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানের মতে এ পুষ্টিরই অপর নাম মহাষষ্ঠী। আর তুলসীর বিবাহ হয়েছিল শঙ্খচূড় নামক এক অসুরের সঙ্গে।
         এ বিবাদের পর থেকে গনেশের পুজায় তুলসী পত্র আর লাগে না।
                                                ..................স্বামী নির্মলানন্দ ( মূর্তি পুজা কি ও কেন )


<<<<<<<<<>>>>>>>>>>  

                    

Tuesday, November 26, 2013

Bengali explanation of Gayatri Mantra



মহাগায়ত্রী মন্ত্র
*****************
গায়ত্রী ঋগ্বেদে উল্লিখিত একটি শ্লোক এই শ্লোকটি হিন্দু বিশ্বাসে পবিত্র দেবীরূপে কল্পিত দেবী গায়ত্রী ব্রহ্মার স্ত্রী চার বেদেরজননী
মহাগায়ত্রী মন্ত্রটি হল
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।।
মন্ত্রটির সরলার্থ হচ্ছে; “সর্বলোকের প্রকাশক সর্বব্যাপী সবিতা মণ্ডল জগৎ প্রসবকারী সেই পরম দেবতার বরেণ্য জ্ঞান শক্তি ধ্যান করি; যিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি প্রদান করেছেন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ কৃত অনুবাদঃ
যা হতে বাহিরে ছড়ায়ে পড়িছে পৃথিবী আকাশ তারা ,
যা হতে আমার অন্তরে আসে বুদ্ধি চেতনা ধারা
তাঁরি পূজনীয় অসীম শক্তি ধ্যান করি আমি লইয়া ভক্তি"
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এই মন্ত্রে পদ্যে যে বঙ্গানুবাদ করেন সেটি হল,
তিমির-রূপিনী নিশাসবিতা-সুন্দর!
সে তিমিরে তোমার সৃজন,
বিমল উজল আলোসৌন্দর্য-আধার!
ফুল্ল-ঊষাঅপূর্ব-মিলন
কুসুমিতা বসুন্ধরা-
দ্যু-লোক আলোক-ভরা-
জনয়িতা-সবিতা-সবার!
বরণীয়-রমণীয় নিত্য জ্ঞানাধার! (সবিতা)
দেবী গায়ত্রীর তিন রূপ সকালে তিনি ব্রাহ্মী; রক্তবর্ণা অক্ষমালা-কমণ্ডলুধারিনী মধ্যাহ্নে বৈষ্ণবী; শঙ্খ, চক্র, গদা ধারণকারিনী সন্ধ্যায় শিবানী; বৃষারূঢ়া, শূল, পাশ নরকপাল ধারিনী এবং গলিত যৌবনা
শব্দ-কল্পদ্রুম অনুসারে, যজ্ঞকালে একবার ব্রহ্মার স্ত্রী সাবিত্রী একা যজ্ঞস্থলে আসতে অস্বীকৃত হলে, ব্রহ্মা ক্রুদ্ধ হয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করে যজ্ঞ সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করেন তাঁর ইচ্ছানুসারে পাত্রী খুঁজতে বের হয়ে এক আভীরকন্যাকে (গোয়ালিনী) পাত্রী মনোনীত করেন ইন্দ্র বিষ্ণুর অনুরোধে তাঁকে গন্ধর্ব মতে বিবাহ করেন ব্রহ্মা এই কন্যাই গায়ত্রী
গায়ত্রীর ধ্যানে আছে, তিনি সূর্যমণ্ডলের মধ্যস্থানে অবস্থানকারিনী, বিষ্ণু বা শিবরূপা, হংসস্থিতা বা গরুড়াসনা বা বৃষবাহনা তিনি একাধারে ব্রহ্মা, বিষ্ণু শিব হিন্দু বিধান অনুসারে, সকাল, দুপুর সন্ধ্যায় গায়ত্রী ধ্যান করতে হয় এবং এই মন্ত্র ধ্যান বা পাঠে মুক্তি প্রাপ্ত হয় বলে এর নামগায়ত্রী বেদজ্ঞ আচার্যের কাছে এই মন্ত্রে দীক্ষিত হলে তাঁর পূর্ণজন্ম হয় তিনি দ্বিজ নামে খ্যাত হন সেই কারণে দ্বিজ অর্থাৎ ব্রাহ্মণগণের উপাস্য বৈদিক গায়ত্রী মন্ত্রে আদলেই অন্যান্য দেবতার গায়ত্রী রচিত হয়েছে
                                           …………………….. লিপ্টন রায় …………………..

Like us on FB: Alokito Manush

<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>> 

Wednesday, November 13, 2013

গনেশ একদন্ত হলেন কিভাবে?



গনেশ একদন্ত হলেন কিভাবে?
           গজানন গণপতি যুদ্ধে তার একটি দন্ত হারিয়ে নাম ধরেছেন একদন্ত। এই যুদ্ধটা ঘটেছিল ক্ষত্রিয়কুলান্তক পরশুরামের সঙ্গে। ইনি বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। হর-দুর্গার দর্শন মানসে একদিন তিনি কৈলাসে উপস্থিত। কিন্তু মহাদেব ও মহাদেবী তখন অন্তঃপুরে নিদ্রামগ্ন। দ্বাররক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন গনেশ। তার উপর কঠোর আদেশ – বিনা অনুমতিতে কেউ যেন ভিতরে প্রবেশ না করে।
                       পরশুরাম দ্বারে এসেই দাবী জানান অন্তঃপুরে অনুপ্রবেশের। কিন্তু গনেশ দ্বার ছাড়েন না, বলেন – ‘আদেশ নেই’। কিন্তু কে শোনে কার নিশেধ? দুর্ধর্ষ ক্ষত্রিয় বীর গনেশকে অগ্রাহ্য করেই ভিতরে প্রবেশে উদ্যত। প্রথমে গনেশের সহিত এক প্রস্ত বচসা, তারপর ধস্তাধস্তি, পরিশেষে তুমুল যুদ্ধ। পরশুরাম প্রচণ্ড কুঠারাঘাতে তার একটি দন্ত ভেঙ্গে দেন। দন্ত ভগ্ন হওয়ায় গনেশ রুধিরাক্ত কলেবর। তথাপি, তিনি পিতৃমাতৃ-আদেশ প্রতিপালনে অবিচলিত। একদন্ত হয়েও তিনি কর্তব্য পালনে স্থির।
                    এদিকে দুই বীরের বাকবিতণ্ডা, রনহুঙ্কার ও ধস্তাধস্তিতে হর-পার্বতীর নিদ্রা ভঙ্গ হয়। দ্বারে এসে দেখেন একদিকে শিবশিষ্য ভার্গব, অন্যদিকে ভগ্নদন্ত গজানন-দুইের মধ্যে মহাকুরুক্ষেত্র। কুমার নিরপরাধ; সে উপযুক্ত কতব্য নিষ্ঠারই পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু ভার্গব শিষ্য হয়েও শিষ্যচিত আচরন করেননি। অসময়ে শ্রীগুরুর বিশ্রাম ভঙ্গের প্রচেষ্টা শিষ্যের কর্তব্য নহে। শিষ্য বলে শিব এ  অপরাধ ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু নিষ্পাপ বালকের এ হেন দুর্দশা জননীর কোমল প্রানে সইবে কেন? তিনি যথোচিত তিরস্কার করেন পরশুধারী  ভার্গবকে। দেখতে দেখতে দেবীর রণচণ্ডিকা মূর্তি ধারন। শানিত অসি ঝলমল করে ওঠে।  ভার্গব দেখেন – আর রক্ষা নাই। বড় কঠিন স্থানে তিনি আঘাত দিয়ে বসেছেন। এক্ষণে উপায়?
            উপায় একটা হলো। ভার্গব একান্ত চিত্তে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যানপরায়ন। বৈকুণ্ঠপতি দুই কুল বাচাতে স্বয়ং উপনীত হন কৈলাসধামে। তবে স্বরূপে নয়  - ব্রাহ্মণ অতিথি বেশে। এর আগেও আমরা দেখেছি – দেবী ব্রাহ্মণকে বড় সমাদর করেন। ব্রাহ্মণ নানা প্রবোধ বাক্যে অতি সহজেই দেবীর ক্রোধের শান্তি করে দেন। এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান ভার্গব।

                          ------------- স্বামী নির্মলানন্দ (মূর্তিপুজা কি ও কেন?)


<<<<<<<<<>>>>>>>>>