Wednesday, November 13, 2013

গনেশ একদন্ত হলেন কিভাবে?



গনেশ একদন্ত হলেন কিভাবে?
           গজানন গণপতি যুদ্ধে তার একটি দন্ত হারিয়ে নাম ধরেছেন একদন্ত। এই যুদ্ধটা ঘটেছিল ক্ষত্রিয়কুলান্তক পরশুরামের সঙ্গে। ইনি বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। হর-দুর্গার দর্শন মানসে একদিন তিনি কৈলাসে উপস্থিত। কিন্তু মহাদেব ও মহাদেবী তখন অন্তঃপুরে নিদ্রামগ্ন। দ্বাররক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন গনেশ। তার উপর কঠোর আদেশ – বিনা অনুমতিতে কেউ যেন ভিতরে প্রবেশ না করে।
                       পরশুরাম দ্বারে এসেই দাবী জানান অন্তঃপুরে অনুপ্রবেশের। কিন্তু গনেশ দ্বার ছাড়েন না, বলেন – ‘আদেশ নেই’। কিন্তু কে শোনে কার নিশেধ? দুর্ধর্ষ ক্ষত্রিয় বীর গনেশকে অগ্রাহ্য করেই ভিতরে প্রবেশে উদ্যত। প্রথমে গনেশের সহিত এক প্রস্ত বচসা, তারপর ধস্তাধস্তি, পরিশেষে তুমুল যুদ্ধ। পরশুরাম প্রচণ্ড কুঠারাঘাতে তার একটি দন্ত ভেঙ্গে দেন। দন্ত ভগ্ন হওয়ায় গনেশ রুধিরাক্ত কলেবর। তথাপি, তিনি পিতৃমাতৃ-আদেশ প্রতিপালনে অবিচলিত। একদন্ত হয়েও তিনি কর্তব্য পালনে স্থির।
                    এদিকে দুই বীরের বাকবিতণ্ডা, রনহুঙ্কার ও ধস্তাধস্তিতে হর-পার্বতীর নিদ্রা ভঙ্গ হয়। দ্বারে এসে দেখেন একদিকে শিবশিষ্য ভার্গব, অন্যদিকে ভগ্নদন্ত গজানন-দুইের মধ্যে মহাকুরুক্ষেত্র। কুমার নিরপরাধ; সে উপযুক্ত কতব্য নিষ্ঠারই পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু ভার্গব শিষ্য হয়েও শিষ্যচিত আচরন করেননি। অসময়ে শ্রীগুরুর বিশ্রাম ভঙ্গের প্রচেষ্টা শিষ্যের কর্তব্য নহে। শিষ্য বলে শিব এ  অপরাধ ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু নিষ্পাপ বালকের এ হেন দুর্দশা জননীর কোমল প্রানে সইবে কেন? তিনি যথোচিত তিরস্কার করেন পরশুধারী  ভার্গবকে। দেখতে দেখতে দেবীর রণচণ্ডিকা মূর্তি ধারন। শানিত অসি ঝলমল করে ওঠে।  ভার্গব দেখেন – আর রক্ষা নাই। বড় কঠিন স্থানে তিনি আঘাত দিয়ে বসেছেন। এক্ষণে উপায়?
            উপায় একটা হলো। ভার্গব একান্ত চিত্তে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যানপরায়ন। বৈকুণ্ঠপতি দুই কুল বাচাতে স্বয়ং উপনীত হন কৈলাসধামে। তবে স্বরূপে নয়  - ব্রাহ্মণ অতিথি বেশে। এর আগেও আমরা দেখেছি – দেবী ব্রাহ্মণকে বড় সমাদর করেন। ব্রাহ্মণ নানা প্রবোধ বাক্যে অতি সহজেই দেবীর ক্রোধের শান্তি করে দেন। এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান ভার্গব।

                          ------------- স্বামী নির্মলানন্দ (মূর্তিপুজা কি ও কেন?)


<<<<<<<<<>>>>>>>>>    

No comments:

Post a Comment