Wednesday, September 4, 2013

ভক্তেরা ভগবানকে যে ভোগ অর্পণ করেন তা কি ভগবান গ্রহন করেন?

প্রশ্নঃ ভক্তেরা ভগবানকে যে ভোগ অর্পণ করেন তা কি ভগবান গ্রহন করেন?

            উত্তরঃ ভগবানের রাজত্বে বস্তুর প্রাধান্য নেই, আছে ভাবের প্রাধান্য। ভাবের জন্যই ভগবান ভক্ত অর্পিত বস্তু এবং পূজাদি ক্রিয়া কলাপ স্বীকার করেন। ভক্তের যদি ভাব হয় ভগবানকে খাওয়াবার তখন ভগবানেরও খিদে এবং তিনি প্রকট হয়ে ভোজন করেন। ভক্তের ভাবে বা ভালবাসাতে ভগবান যে বস্তু গ্রহন করেন, সে বস্তু আর বিনষ্ট হয় না। তা দিব্য বা চিন্ময় হয়ে যায়। যদি এইরুপ ভাব না-ও হয়, কিছু কম ভাব হয়, তাহলেও ভগবান ভক্ত ভোগ অর্পণ করলেই সন্তুষ্ট হন। ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য বস্তু বা ক্রিয়ার প্রাধান্য নেই, শুধু ভাবেরই প্রাধান্য। সাধুরা বলেন -                                                                
                ভাগ ভগত কী রাবড়ী, মীঠী লাগে ‘বীর’।
                বিনা ভাব ‘কালু’ কহে, কড়বী লাগে খীর।।
শুধু মানুষের উপর নয়, পশুদের উপরও এর প্রভাব পড়ে। যে গোবৎসের মা গাভীটি মারা যায়, লোকে তাকে অন্য গাভীর দুধ খাওয়ায়, তাতে সেই বাছুরটি বেঁচে যায় ঠিকই, কিন্তু হৃষ্টপুষ্ট হয় না। কিন্তু যদি সেই গোবৎসটি তার নিজের মায়ের দুধ খেত তাহলে অল্প খেলেও সে হৃষ্টপুষ্ট হতো, কেন না তার মা তাকে দুধ খাওয়াবার সময় আদর করত, গা চেটে দিত, সেই ভালবাসাতেই সে পুষ্ট হোতো। যখন মানুষ বা পশুর উপরে ভাবের প্রভাব পড়ে তাহলে অন্তর্যামী ভগবানের উপরেও যে ভাবের প্রভাব পড়বে তাতে আর বলার কি আছে? বিদুরের স্ত্রীর এইরুপ ভাব ছিল বলেই ভগবান তার হাত থেকে কলার খোসা পর্যন্ত খেয়েছিলেন। গোপিনীদের এই ভাব ছিল বলেই ভগবান হাত থেকে কেড়ে দই, মাখন খেয়েছিলেন। শ্রীব্রহ্মাকে ভগবান বলছেন যে –
                নৈবেদ্যং পুরতো ন্যস্তং চক্ষুধা গৃহ্যতে ময়া।
                রসং চ দাসজিহ্বায়ামশ্নামি কমলোদ্ভব।।
অনুবাদঃ হে কমলোদ্ভব! আমার সামনে অর্পিত ভোগসমুহ আমি নেত্র দ্বারা গ্রহন করি ; কিন্তু তার স্বাদ আমি ভক্তদের জিহ্বা দ্বারাই গ্রহন করি।
         সুতরাং ভক্তেরা যে ভোগ ভগবানকে অর্পণ করেন তার সাথে আসলেই যদি প্রকৃত ভালবাসা এবং ভক্তি থাকে তবে তা অবশ্যই ভগবান গ্রহন করবেন।
                                                            --------------------- স্বামী রামসুখ দাস। 


No comments:

Post a Comment