শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞানই আমাদের দুঃখরাশির
আত্যন্তিক নিবৃত্তি করিতে পারে। অন্য যে কোন জ্ঞান কিছু সময়ের জন্য মাত্র আমাদের
অভাব মিটাইতে পারে। আত্মজ্ঞানের উন্মেষ হইলেই অভাব-বোধ চিরতরে বিদূরিত হয়।
দৈহিক শক্তির বিকাশ অবশ্যই বড় কথা; বৈজ্ঞানিক তথ্যানুসন্ধী যন্ত্রসমুহের
মধ্য দিয়া মনীষার যে অভিব্যাক্তি দেখা যায়, তাহাও অদ্ভুত বটে; তবুও আত্মিক শক্তি
জগতের উপর যে প্রভাব বিস্তার করে, তাহার তুলনায় এই সব শক্তি নগন্য।
যন্ত্র কখনো মানুষকে সুখী করিতে পারে নাই, কখনো পারিবে না। যাহারা
যন্ত্র-সভ্যতার মাহাত্ম্য প্রচার করে, তাহাদের মতে যন্ত্রের মধ্যেই সুখ নিহিত।
বাস্তবিক পক্ষে সুখের উদ্ভব ও স্থিতি মনেই। মন যাহার বশে, সেই কেবল সুখী, ওপর কেহ
নয়। সমগ্র পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করার শক্তিও যদি পাও, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের প্রত্যেকটি
পরমাণুকে যদি করতলগত করিতে পারো, তাহাতেই বা তোমার কি লাভ? বস্তুতঃ প্রকৃতিকে জয়
করিবার জন্যই মানুষের জন্ম; পাশ্চাত্য জনগন ‘প্রকৃতি’ বলিতে স্থুল অর্থাৎ বহিঃপ্রকৃতিকেই
বুঝিয়া থাকে। অশেষ শক্তির আধার নদী, পর্বত, সাগর প্রভৃতি অসংখ্য বৈচিত্র্যের
সমাবেশে এই বহিঃপ্রকৃতি সত্যই বিরাট। কিন্তু ইহা অপেক্ষাও এক মহত্তর প্রকৃতি –
মানুষের অন্তর্জগৎ। এই অন্তর্জগতের সমীক্ষাতেই প্রাচ্য প্রতিভা – সম্যক বিকশিত
হইয়াছে, যেমন বহিজগতের ক্ষেত্রে প্রতীচ্য প্রতিভা।
পাশ্চাত্য দেশে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতে যেমন সত্য, প্রাচ্যে অতীন্দ্রিয় জগত
সেইরুপ। মানব জাতির অগ্রগতির জন্য পাশ্চাত্য আদর্শের মতো প্রাচ্য আদর্শেরও প্রয়োজন
রহিয়াছে; বোধ হয় সে প্রয়োজন আরও বেশি।
পার্থিব ক্ষমতায় শক্তিশালী
জাতিগুলি মনে করে যে, ঐ শক্তিই একমাত্র কাম্য, উহাই প্রগতি ও সংস্কৃতি; যাহাদের
বিত্তলালসা নেই, ঐহিক প্রতাপ নাই – তাহারা বাচিয়া থাকিবার অযোগ্য। পক্ষান্তরে অন্য
কোন জাতি মনে করিতে পারে – নিছক জড়বাদী একান্ত নিরর্থক! প্রত্যেকটিরই নিজস্ব
গুরুত্ব ও মহিমা আছে। এই দুইটি আদর্শের মিলন ও সামঞ্জশ্যই হইবে বর্তমান কালের
মীমাংসা।
--------------------- স্বামী বিবেকানন্দ।
<<<<<<<<<>>>>>>>>>
No comments:
Post a Comment