Sunday, June 30, 2013

বিশ্ব পালনে ব্রহ্মার ভুমিকা কি?



বিশ্ব পালনে ব্রহ্মার ভুমিকা কি?

           আমরা সকলেই জানি একজন সন্তানের জনক হয় তার পিতা। কিন্তু জন্মদান করেই কি তার সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? সন্তান পালন কি তার দায়িত্ব নয়? ব্রহ্মা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং তার অন্তর্গত সকল প্রজাবর্গের জনক, কিন্তু সৃষ্টি করেই তিনি দায়মুক্ত হতে পারেন না। সৃষ্টি রক্ষায়ও তাকে শ্রম স্বীকার করতে হয়। বিশ্বের মঙ্গল চিন্তা করেই তিনি প্রজা সৃষ্টির পূর্বে প্রকাশ করেছেন বেদের। বেদই ধর্মাধর্ম, পাপ-পুন্য, কর্তব্যাকর্তব্যের নিয়ামক। বেদই সংসারবৃক্ষের পত্রস্বরূপ। এই বেদরুপি পত্রের শীতল ছায়াতলেই জগতে সবাই সুখী ও সমৃদ্ধশালী হতে পারে। আমরা সকলেই জানি বেদের দুইটি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হল জ্ঞানকাণ্ড ও কর্মকাণ্ড। কর্মকাণ্ডে বিভবময় ও স্বর্গজনক যাগ যজ্ঞাদির নির্দেশ, সদনুষ্ঠানের প্রেরণা; জ্ঞানকাণ্ডে আত্মতত্ত্বের অমৃতপম উপদেশ। ব্রহ্মার করস্থিত স্রুব বা হোমপাত্র বেদের কর্মকাণ্ডের প্রতীক। গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের দশম স্লোকে বলা হয়েছে প্রজাপতি ব্রহ্মা যজ্ঞের সহিতই প্রজা সৃষ্টি করেছিলেন। উদ্দেশ্য-প্রজাগনের প্রতিপালন ও সুখসমৃদ্ধি সাধন, কেন না যজ্ঞ ইষ্টকামধুক, যজ্ঞ মানুষের সকল শুভকামনাই পূর্ণ করে। পক্ষান্তরে, ব্রহ্মার দক্ষিনাধঃ করস্থিত জপমালা এবং তদীয় বাহন হংস বৈদিক জ্ঞানকাণ্ডের সুচনা দেয়।অহং সঃ বা হংস এ মন্ত্রই আত্মজ্ঞান সাধনার মুল বীজ। ব্রহ্মার জপমালায় ঐ মন্ত্রই অহর্নিশ জপিত।
                   ব্রহ্মার দুই ভার্যা - সাবিত্রী ও সরস্বতী। ব্রহ্মার সৃষ্টি এবং পালনধর্ম তদীয় দুই সহধর্মিণীর মধ্যেও পরিলক্ষিত। সাবিত্রী বিশ্বপ্রসবিনী, সৃষ্টিরুপা ; সরস্বতী সর্ববিদ্যার প্রকাশিকারুপে বিশ্বপালিনী, পালনরূপা।


===+++ ভীম রুদ্র +++===

Wednesday, June 26, 2013

শিব কি বৈদিক দেবতা?



শিব কি বৈদিক দেবতা?

          বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে শিব প্রথমে অনার্যগণ দ্বারা পূজিত ছিলেন। তাই বৈদিক যাগযজ্ঞে শিবের হবির্ভাব ছিল না। এই জন্য দক্ষ তদীয় আয়োজিত যজ্ঞে শিবকে নিমন্ত্রন করেননি। দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড হওয়ায় শিব যজত রুপে স্বীকৃতি লাভ করেন ও অন্যান্য দেবতার মত তারও যজ্ঞভাগ সুনির্দিষ্ট হয়। এই মত অনুসারে শিবকে অবৈদিক দেবতা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে শিব যে বৈদিক দেবতা ছিলেন তার পক্ষেও অনেক প্রমান পাওয়া যায়।  
           শিবপুরান শিবকে বৈদিক দেবতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছেঃ আদিত্যমণ্ডল মধ্যবর্তী হিরণ্যশ্মশ্রু, হিরণ্যকেশ নখ হইতে কেশাগ্র পর্যন্ত যে হিরন্ময় পুরুষ দৃষ্ট হন, তিনিই ভক্তকল্যানকারী সাক্ষাৎ শিব।
          বেদে রুদ্রের বিশেষণরূপে শিব শব্দটির উল্লেখ আছে। আসলে পৌরাণিক শিব আর বৈদিক রুদ্র অভিন্ন। রুদ্রের অনেক ভাবই শিবচরিত্রে পাওয়া যায়। যেমন, যজুর্বেদে রুদ্র নীলগ্রীব বা শিতিকণ্ঠ; ঋগ্বেদে (৭/৫৯/১২) তাকে বলা হয়েছে ত্রম্বক; তিনি কপর্দ্দী বা জটাজুটধারী, তিনি বজ্রধারী। রুদ্রের এই সব বৈশিষ্ট্য হুবহু পাওয়া যায় পৌরাণিক শিবের মাঝে। রুদ্রের বজ্রই পরিবর্তিত আকারে শিবের অপরাজেয় পাশুপাত অস্ত্র হয়েছে বলে সহজেই ধারনা করা যায়।
                    আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্তের মাধ্যমে রুদ্র ও শিবের একাত্মতা প্রকাশ করা জেতে পারে। যেমন বেদে রুদ্র বদান্য, কল্যাণপ্রদ ও সহজেই সন্তুষ্ট; পৌরাণিক শিবও নিত্য মঙ্গলময়, তিনি আশুতোষ। বেদের রুদ্র ভয়ানক ও ধ্বংসকারী, পক্ষান্তরে পৌরাণিক শিবও সংহারের দেবতা ও প্রলয়ের প্রতিভূ। বেদের রুদ্র শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, অনেক ভাল ভাল ঔষধী তিনি জানেন, আবার পৌরাণিক শিবেরও এক নাম বৈদ্যনাথ, তিনি আয়ুর্বেদের রসবিজ্ঞান শাখার উপদেষ্টা। ঋগ্বেদের একাধিক মন্ত্রে (২/৩৩/৪,৬,৭) রুদ্রকে বলা হয়েছে বৃষভ, পৌরাণিক শিবও বৃষবাহন, তার এক নাম বৃষভধ্বজও বটে। বেদের রুদ্র ধনুর্বাণধারী, পৌরাণিক শিবের কিরাতরূপ ধারণে তদীয় শ্রীকরে ধনুর্বাণ পরিশোভিত।
                    রুদ্র ছাড়াও বৈদিক দেবতা পূষা ও সোমের সাথেও পৌরাণিক শিবের মিল পাওয়া যায়। শিবের মত পূষাও জটাজুটধারী। বৈদিক পূষা গোরক্ষক বা পশুরক্ষক দেবতা, পৌরাণিক শিব গো সমুহের অধিপতিরুপে বর্ণিত। পূষার এক নাম অনষ্টপশু, শিবও পশুপতি নামে খ্যাত। পূষার আয়ুধ তীক্ষ্নাগ্র লৌহদণ্ড বা শূল, শিবের হস্তে শানিত ত্রিশূল। সোমের সহিত শিবের তুলনামুলক বিচারে দেখা যায়- শিবের আরেক নাম সোম। ঐ সোমচিহ্ন ললাটে ধারনপূর্বক শিব হয়েছেন সোমার্দ্ধমৌলি বা চন্দ্রমৌলি। সোম বা চন্দ্রের স্নিগ্ধোজ্জ্বল কিরণসুধা শ্রীঅঙ্গে লেপন করে নিয়েই যেন তিনি হয়েছেন রজতগিরিনিভ। কোন কোন পণ্ডিত বলেন এই সোম কথাটার মধ্যেই পৌরাণিক শিব-পার্বতী বা তান্ত্রিক শিব-শক্তির তত্ত্বজীব নিহিত। উমার সহিত যিনি বর্তমান, (স+উম) তিনিই সোম। এই উমাই পুরাণের পার্বতী এবং তন্ত্রের শক্তি।
                
                         সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি পৌরাণিক শিবের অনেক বৈশিষ্ট্য আমরা বৈদিক দেবতাদের মাঝে খুজে পাই। তাই শিবকে বৈদিক দেবতা বলাটা হয়ত ভুল হবে না।



===+++অর্জুন রুদ্র+++===

Sunday, June 23, 2013

হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মের ধারনা

হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মের ধারনাঃ

পুনর্জন্মের ধারনা হিন্দুধর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। হিন্দুধর্মের পণ্ডিতগণের মত হল পুনর্জন্ম যদি নাই থাকে তাহলে ধর্ম ও সাধন ভজনের কোনও প্রয়োজনীয়তা থাকে না। শুধুমাত্র জৈবিক ক্রিয়াকর্মের দ্বারা জীবনপাত করার কোন অর্থ হয় না। কোনমতে নিজ দেহের পতন ঘটনাই জন্মের লক্ষ্য হতে পারে না। এশিয়া মহাদেশের বহুলাংশে পুনর্জন্মবাদকে অনেকটা সাধারন বুদ্ধি দিয়ে স্বতঃসিদ্ধ বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। জন্মান্তর হিন্দুমাত্রেরই মজ্জাগত। যারা এটিতে বিশ্বাস আনয়ন করতে পারেন না বা আগ্রহী নন, তারা হিন্দু নামে অভিহিত হতে পারেন না। গীতাতেও পুনর্জন্মের প্রতিবাদন করার মত অনেক কথা পাওয়া যায়। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন
           ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং নেমে জনাধিপাঃ।
           ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃ পরম।।
                                                                           (২/১২)
অনুবাদঃ এমন নয় যে আমি কোন কাল ছিলাম না অথবা তুমি ছিলে না কিংবা এইসব রাজা ছিল না।আর এমনও নয় যে ভবিষ্যতে আমরা কেউ থাকব না।

           বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরানি।
           তথা শরীরানি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী।।  (২/২২)
অনুবাদঃ মানুষ যেমন পুরানো বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে তেমনই জীবাত্মা পুরানো শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর প্রাপ্ত হয়।

           দেহিনোহস্মিন যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা।
           তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিধীরস্তত্র ন মুহ্যতি।।                        (২/১৩)
অনুবাদঃ যেমন জীবাত্মার এই দেহে শৈশব, যৌবন এবং বৃদ্ধাবস্থা হয় তেমনই অন্য শরীর প্রাপ্ত হয়; এই বিষয়ে ধীর পুরুষ মোহিত হয় না।

     চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন
           
           বহূনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।
           তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরংতপ।।
 অনুবাদঃ হে পরন্তুপ অর্জুন! আমার এবং তোমার অনেক জন্ম হয়েছে। সেগুলো তুমি জান না, কিন্তু আমি জানি।    
         তাছাড়াও গীতার আরও অনেক শ্লোক রয়েছে যা পুনর্জন্মের ধারনাকে সমর্থন করে। তাছারাও বিভিন্ন জাতিস্মরের কাহিনী থেকে আমরা পুনর্জন্মের সত্যতা খুজে পাই। উনিশ শতকে জাতিস্মর শান্তি দেবীর কাহিনী পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। বিভিন্ন গবেষক তার বলা পূর্ব জন্মের ঘটনার সত্যতা খুজে পান। এছারাও বিজ্ঞানী ইয়ান ষ্টিভেনসন এরকম অনেক জাতিস্মর নিয়ে কাজ করেছেন। তার কাছে এরকম হাজার জাতিস্মরের ঘটনার উল্লেখ আছে। পুনর্জন্ম নিয়ে কাজ করছেন এমন অনেক গবেষকের মতে অনেক শিশুর বর্তমান চরিত্র নির্ভর করে পূর্বজন্মের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর।  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুনর্জন্মের ধারনা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪% লোক পুনর্জন্মের ধারনায় বিশ্বাসী। হিন্দুধর্ম মূলত এই দর্শনের উপরেই প্রতিষ্ঠিত। তাই আমরা হিন্দু হয়ে গর্ববোধ করি।

===+++ অর্জুন রুদ্র +++==   

Like us: www.facebook.com/Alokito.Manush.Knowledge

Thursday, June 20, 2013

হিন্দু ধর্মের নয়টি বিশ্বাস



হিন্দুধর্মের নয়টি বিশ্বাসঃ   

আমাদের বিশ্বাস জীবন সম্পর্কে আমাদের ধারনা এবং জীবনাচরণকে নির্ধারণ করে যা আমাদের কর্মকেও নির্দেশ করে। আমরা কর্মের দ্বারা আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করি। ঈশ্বর, আত্মা এবং বিশ্বনিখিল- এই তিনটি বিষয় সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হিন্দুরা নানাবিধ বিষয়ে বিশ্বাস করে কিন্তু তারা কিছু মৌলিক ধারনায় এসে মিলিত হয়। নিন্মবর্ণিত নয়টি বিশ্বাস আমাদের হিন্দু আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়ঃ

                     ১)আমরা (হিন্দুরা) বিশ্বাস করি এক পরমাত্মায় যিনি একই সাথে আভ্যন্তরীণ এবং ব্রহ্মাণ্ডের অতীত, এবং সৃষ্টিকর্তা ও এক অস্পষ্ট বাস্তবতা।
                     ২)আমরা বিশ্বের সর্বপ্রাচীন ও স্বর্গীয় গ্রন্থ বেদে এবং একই সাথে তন্ত্রে মন্ত্রে বিশ্বাসী। এই স্তোত্রগুলি হল ঈশ্বরের বানী এবং শাশ্বত সনাতন ধর্মের মৌলিক বিষয়।
                     ৩)আমরা বিশ্বাস করি মহাবিশ্ব সমাপ্তিহীন সৃষ্টি, স্থিতি এবং বিনাশ চক্রের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়।
                     ৪)হিন্দুরা কর্মফলে বিশ্বাসী। কার্যকারনের আইন অনুসারে একজন ব্যাক্তি তার চিন্তাভাবনা, কথা এবং কর্মের মাধ্যমে তার ভাগ্য নির্ধারণ করে।
                     ৫)হিন্দুরা বিশ্বাস করে আত্মা বারবার জীবদেহ গ্রহন করে। বহুজন্মের মধ্যে দিয়ে হিন্দুরা তাদের কর্ম সম্পাদিত করে এবং অবশেষে মোক্ষলাভ ( জন্মমৃত্যু চক্র থেকে মুক্তি লাভ ) প্রাপ্ত হয়। কোন একক আত্মাও এই পদ্ধতি থেকে বঞ্চিত হয় না। 
                     ৬)হিন্দুরা বিশ্বাস করে এক স্বর্গীয় সত্ত্বা বিরাজ করে অদৃশ্য জগতে। মন্দিরে পুজা, উপাসনা, বিভিন্ন পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ব্যাক্তিগত ভক্তি দেবদেবী এবং ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ সৃষ্টি করে।
                     ৭)হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিকতা, ব্যাক্তিগত নিয়ম নিষ্ঠা, সৎ চরিত্র, পবিত্রতা, তীর্থযাত্রা, আত্ম উপলব্ধি, ধ্যান, এবং ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণের জন্য একজন সৎ গুরু অপরিহার্য।
                     ৮)হিন্দুরা বিশ্বাস করে জীবনকে পবিত্র করতে হলে একজন ব্যাক্তিকে তার চিন্তায়, কথায় এবং কর্মে অহিংস ও কোমল হতে হবে।
                     ৯)হিন্দুধর্ম শুধুমাত্র মুক্তির পথ নয়, এটি একই সাথে আমাদের ঈশ্বরের আলোর সন্ধান দেয় এবং আমাদের সহিষ্ণুতা ও চিন্তাশীলতা বৃদ্ধি করে।

                          ***  হিন্দুধর্ম, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম যার কোন শুরু নেই আছে কিছু ইতিহাস। এটির কোন মানব প্রতিষ্ঠাতা নেই। এটি একটি আধ্যাত্মিক ধর্ম যা একজন ভক্তকে সত্যের পথ দেখায় এবং চেতনার সর্ব উচ্চ শিখরে পৌছতে সাহায্য করে যেখানে আত্মা এবং পরমাত্মা মিলিত হয়। হিন্দুধর্মের চারটি শাখা আছে শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব ও স্মার্ত।


~~ জয় হিন্দুত্ব~~
~~ অর্জুন রুদ্র, ওয়াক্স ক্রেয়ন, ইন্দ্র রায় ~~  

Like us on: www.facebook.com/Alokito.Manush.Knowledge          

Wednesday, June 19, 2013

নারী জাতির উন্নয়ন ও স্বামী বিবেকানন্দ








ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারী জাতির উন্নতি ব্যাতিত ভারতবর্ষের উন্নয়ন অসম্ভব। এই বাস্তব সত্য স্বামীজী অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি প্রতিনিয়ত ভাবতেন কিভাবে নারী জাতিকে সমাজের দৈন্যদশা থেকে মুক্ত করা যায়। নারী জাতিকে নিয়ে স্বামীজির চিন্তা ও পরিকল্পনার কিছু অংশ নিচে দেয়া হলঃ

    .........  সাধারনের ভেতর আর মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার না হলে কিছু হবার জো নেই । সেজন্য  আমার ইচ্ছা কতকগুলি  ব্রহ্মচারী    ব্রহ্মচারিণী  তৈরি  করব। ......ব্রহ্মচারিণীরা মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার করবে। কিন্তু দেশী ধরণে ঐ কাজ করতে হবে। পুরুষদের জন্য যেমন কতকগুলি শিক্ষাকেন্দ্র করতে হবে, মেয়েদের শিক্ষা দিতেও সেইরুপ কতকগুলি কেন্দ্র করতে হবে। শিক্ষিতা ও সচ্চরিত্রা ব্রহ্মচারিণীরা ঐ সকল কেন্দ্রে মেয়েদের শিক্ষার ভার নেবে। পুরান, ইতিহাস, গৃহকার্য, শিল্প, ঘরকন্নার নিয়ম ও আদর্শ চরিত্র গঠনের সহায়ক নীতিগুলি বর্তমান- বিজ্ঞানের সহায়তায় শিক্ষা দিতে হবে। ছাত্রীদের ধর্মপরায়ন ও নীতিপরায়ণ করতে হবে। কালে যাতে তারা ভাল গিন্নি তৈরি হয়, তাই করতে হবে। এই সকল মেয়েদের সন্তানসন্ততিগণ পরে ঐ সকল বিষয়ে আরও উন্নতি লাভ করতে পারবে। যাদের মা শিক্ষিতা ও নীতিপরায়ণা হন, তাদের ঘরেই বড়লোক জন্মায়। ... মেয়েদের আগে তুলতে হবে, জনসাধারণকে জাগাতে হবে; তবে তো দেশের কল্যাণ।
                ধর্ম, শিক্ষা, বিজ্ঞান, ঘরকন্না, রন্ধন, সেলাই, শরীরপালন এ- সব বিষয়ে স্থুল মর্মগুলোই মেয়েদের শেখানো উচিত। ......সব বিষয়ে চোখ ফুটিয়ে দিতে হবে। আদর্শ নারী চরিত্রগুলি ছাত্রীদের সামনে সর্বদা ধরে উচ্চ ত্যাগরূপ ব্রতে তাদের অনুরাগ জন্মে দিতে হবে। সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী, লীলাবতী, খনা, মীরা এদের জীবনচরিত্র মেয়েদের বুঝিয়ে দিয়ে তাদের নিজেদের জীবন ঐরূপে গঠন করতে হবে।
               .........বৈদিক যুগে, উপনিষদের যুগে দেখতে পাব- মৈত্রেয়ী গার্গী প্রভৃতি প্রাতঃস্মরণীয়া মেয়েরা ব্রম্মবিচারে ঋষিস্থানীয়া হয়ে রয়েছেন। হাজার বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের সভায় গার্গী সগর্বে যাজ্ঞবল্ককে ব্রম্মবিচারে আহবান করেছিলেন।.........মেয়েদের পূজা করেই সব সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সে দেশ সে জাত কখনও বড় হতে পারেনি, কস্নিন কালে পারবেও না। তোদের জাতের যে এত অধঃপতন ঘটেছে, তার প্রধান কারণ এইসব শক্তিমূর্তির অবমাননা করা। .........যেখানে স্ত্রীলোকের আদর নেই, স্ত্রীলোকেরা নিরানন্দে অবস্থান করে, সে সংসারে- সে দেশের কখন উন্নতির আশা নেই। এজন্য এদের আগে তুলতে হবে- এদের জন্য আদর্শ মঠ স্থাপন করতে হবে।

                  পরিশেষে বলা যায় যে স্বামীজি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন নারীজাতির উন্নয়ন সম্পর্কে তা বাস্তবায়নে বর্তমান তরুণদের এগিয়ে আসা উচিত নতুবা একটি আধুনিক ভারত গঠন চির স্বপ্নই থেকে যাবে।

+++---অর্জুন রুদ্র---+++