Sunday, June 23, 2013

হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মের ধারনা

হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মের ধারনাঃ

পুনর্জন্মের ধারনা হিন্দুধর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। হিন্দুধর্মের পণ্ডিতগণের মত হল পুনর্জন্ম যদি নাই থাকে তাহলে ধর্ম ও সাধন ভজনের কোনও প্রয়োজনীয়তা থাকে না। শুধুমাত্র জৈবিক ক্রিয়াকর্মের দ্বারা জীবনপাত করার কোন অর্থ হয় না। কোনমতে নিজ দেহের পতন ঘটনাই জন্মের লক্ষ্য হতে পারে না। এশিয়া মহাদেশের বহুলাংশে পুনর্জন্মবাদকে অনেকটা সাধারন বুদ্ধি দিয়ে স্বতঃসিদ্ধ বলে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। জন্মান্তর হিন্দুমাত্রেরই মজ্জাগত। যারা এটিতে বিশ্বাস আনয়ন করতে পারেন না বা আগ্রহী নন, তারা হিন্দু নামে অভিহিত হতে পারেন না। গীতাতেও পুনর্জন্মের প্রতিবাদন করার মত অনেক কথা পাওয়া যায়। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন
           ন ত্বেবাহং জাতু নাসং ন ত্বং নেমে জনাধিপাঃ।
           ন চৈব ন ভবিষ্যামঃ সর্বে বয়মতঃ পরম।।
                                                                           (২/১২)
অনুবাদঃ এমন নয় যে আমি কোন কাল ছিলাম না অথবা তুমি ছিলে না কিংবা এইসব রাজা ছিল না।আর এমনও নয় যে ভবিষ্যতে আমরা কেউ থাকব না।

           বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরানি।
           তথা শরীরানি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী।।  (২/২২)
অনুবাদঃ মানুষ যেমন পুরানো বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে তেমনই জীবাত্মা পুরানো শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর প্রাপ্ত হয়।

           দেহিনোহস্মিন যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা।
           তথা দেহান্তরপ্রাপ্তিধীরস্তত্র ন মুহ্যতি।।                        (২/১৩)
অনুবাদঃ যেমন জীবাত্মার এই দেহে শৈশব, যৌবন এবং বৃদ্ধাবস্থা হয় তেমনই অন্য শরীর প্রাপ্ত হয়; এই বিষয়ে ধীর পুরুষ মোহিত হয় না।

     চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে বলেছেন
           
           বহূনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।
           তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরংতপ।।
 অনুবাদঃ হে পরন্তুপ অর্জুন! আমার এবং তোমার অনেক জন্ম হয়েছে। সেগুলো তুমি জান না, কিন্তু আমি জানি।    
         তাছাড়াও গীতার আরও অনেক শ্লোক রয়েছে যা পুনর্জন্মের ধারনাকে সমর্থন করে। তাছারাও বিভিন্ন জাতিস্মরের কাহিনী থেকে আমরা পুনর্জন্মের সত্যতা খুজে পাই। উনিশ শতকে জাতিস্মর শান্তি দেবীর কাহিনী পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। বিভিন্ন গবেষক তার বলা পূর্ব জন্মের ঘটনার সত্যতা খুজে পান। এছারাও বিজ্ঞানী ইয়ান ষ্টিভেনসন এরকম অনেক জাতিস্মর নিয়ে কাজ করেছেন। তার কাছে এরকম হাজার জাতিস্মরের ঘটনার উল্লেখ আছে। পুনর্জন্ম নিয়ে কাজ করছেন এমন অনেক গবেষকের মতে অনেক শিশুর বর্তমান চরিত্র নির্ভর করে পূর্বজন্মের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর।  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুনর্জন্মের ধারনা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪% লোক পুনর্জন্মের ধারনায় বিশ্বাসী। হিন্দুধর্ম মূলত এই দর্শনের উপরেই প্রতিষ্ঠিত। তাই আমরা হিন্দু হয়ে গর্ববোধ করি।

===+++ অর্জুন রুদ্র +++==   

Like us: www.facebook.com/Alokito.Manush.Knowledge

No comments:

Post a Comment