Wednesday, June 26, 2013

শিব কি বৈদিক দেবতা?



শিব কি বৈদিক দেবতা?

          বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে শিব প্রথমে অনার্যগণ দ্বারা পূজিত ছিলেন। তাই বৈদিক যাগযজ্ঞে শিবের হবির্ভাব ছিল না। এই জন্য দক্ষ তদীয় আয়োজিত যজ্ঞে শিবকে নিমন্ত্রন করেননি। দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড হওয়ায় শিব যজত রুপে স্বীকৃতি লাভ করেন ও অন্যান্য দেবতার মত তারও যজ্ঞভাগ সুনির্দিষ্ট হয়। এই মত অনুসারে শিবকে অবৈদিক দেবতা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে শিব যে বৈদিক দেবতা ছিলেন তার পক্ষেও অনেক প্রমান পাওয়া যায়।  
           শিবপুরান শিবকে বৈদিক দেবতা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছেঃ আদিত্যমণ্ডল মধ্যবর্তী হিরণ্যশ্মশ্রু, হিরণ্যকেশ নখ হইতে কেশাগ্র পর্যন্ত যে হিরন্ময় পুরুষ দৃষ্ট হন, তিনিই ভক্তকল্যানকারী সাক্ষাৎ শিব।
          বেদে রুদ্রের বিশেষণরূপে শিব শব্দটির উল্লেখ আছে। আসলে পৌরাণিক শিব আর বৈদিক রুদ্র অভিন্ন। রুদ্রের অনেক ভাবই শিবচরিত্রে পাওয়া যায়। যেমন, যজুর্বেদে রুদ্র নীলগ্রীব বা শিতিকণ্ঠ; ঋগ্বেদে (৭/৫৯/১২) তাকে বলা হয়েছে ত্রম্বক; তিনি কপর্দ্দী বা জটাজুটধারী, তিনি বজ্রধারী। রুদ্রের এই সব বৈশিষ্ট্য হুবহু পাওয়া যায় পৌরাণিক শিবের মাঝে। রুদ্রের বজ্রই পরিবর্তিত আকারে শিবের অপরাজেয় পাশুপাত অস্ত্র হয়েছে বলে সহজেই ধারনা করা যায়।
                    আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্তের মাধ্যমে রুদ্র ও শিবের একাত্মতা প্রকাশ করা জেতে পারে। যেমন বেদে রুদ্র বদান্য, কল্যাণপ্রদ ও সহজেই সন্তুষ্ট; পৌরাণিক শিবও নিত্য মঙ্গলময়, তিনি আশুতোষ। বেদের রুদ্র ভয়ানক ও ধ্বংসকারী, পক্ষান্তরে পৌরাণিক শিবও সংহারের দেবতা ও প্রলয়ের প্রতিভূ। বেদের রুদ্র শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, অনেক ভাল ভাল ঔষধী তিনি জানেন, আবার পৌরাণিক শিবেরও এক নাম বৈদ্যনাথ, তিনি আয়ুর্বেদের রসবিজ্ঞান শাখার উপদেষ্টা। ঋগ্বেদের একাধিক মন্ত্রে (২/৩৩/৪,৬,৭) রুদ্রকে বলা হয়েছে বৃষভ, পৌরাণিক শিবও বৃষবাহন, তার এক নাম বৃষভধ্বজও বটে। বেদের রুদ্র ধনুর্বাণধারী, পৌরাণিক শিবের কিরাতরূপ ধারণে তদীয় শ্রীকরে ধনুর্বাণ পরিশোভিত।
                    রুদ্র ছাড়াও বৈদিক দেবতা পূষা ও সোমের সাথেও পৌরাণিক শিবের মিল পাওয়া যায়। শিবের মত পূষাও জটাজুটধারী। বৈদিক পূষা গোরক্ষক বা পশুরক্ষক দেবতা, পৌরাণিক শিব গো সমুহের অধিপতিরুপে বর্ণিত। পূষার এক নাম অনষ্টপশু, শিবও পশুপতি নামে খ্যাত। পূষার আয়ুধ তীক্ষ্নাগ্র লৌহদণ্ড বা শূল, শিবের হস্তে শানিত ত্রিশূল। সোমের সহিত শিবের তুলনামুলক বিচারে দেখা যায়- শিবের আরেক নাম সোম। ঐ সোমচিহ্ন ললাটে ধারনপূর্বক শিব হয়েছেন সোমার্দ্ধমৌলি বা চন্দ্রমৌলি। সোম বা চন্দ্রের স্নিগ্ধোজ্জ্বল কিরণসুধা শ্রীঅঙ্গে লেপন করে নিয়েই যেন তিনি হয়েছেন রজতগিরিনিভ। কোন কোন পণ্ডিত বলেন এই সোম কথাটার মধ্যেই পৌরাণিক শিব-পার্বতী বা তান্ত্রিক শিব-শক্তির তত্ত্বজীব নিহিত। উমার সহিত যিনি বর্তমান, (স+উম) তিনিই সোম। এই উমাই পুরাণের পার্বতী এবং তন্ত্রের শক্তি।
                
                         সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি পৌরাণিক শিবের অনেক বৈশিষ্ট্য আমরা বৈদিক দেবতাদের মাঝে খুজে পাই। তাই শিবকে বৈদিক দেবতা বলাটা হয়ত ভুল হবে না।



===+++অর্জুন রুদ্র+++===

No comments:

Post a Comment