ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই
নারী। নারী জাতির উন্নতি ব্যাতিত ভারতবর্ষের উন্নয়ন অসম্ভব। এই বাস্তব সত্য
স্বামীজী অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি প্রতিনিয়ত ভাবতেন কিভাবে নারী জাতিকে সমাজের দৈন্যদশা থেকে মুক্ত
করা যায়। নারী জাতিকে নিয়ে স্বামীজির চিন্তা ও পরিকল্পনার কিছু অংশ নিচে দেয়া হলঃ
......... সাধারনের ভেতর আর
মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার না হলে কিছু হবার জো নেই । সেজন্য আমার ইচ্ছা কতকগুলি ব্রহ্মচারী
ও ব্রহ্মচারিণী তৈরি
করব। ......ব্রহ্মচারিণীরা মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার করবে। কিন্তু দেশী ধরণে
ঐ কাজ করতে হবে। পুরুষদের জন্য যেমন কতকগুলি শিক্ষাকেন্দ্র করতে হবে, মেয়েদের
শিক্ষা দিতেও সেইরুপ কতকগুলি কেন্দ্র করতে হবে। শিক্ষিতা ও সচ্চরিত্রা
ব্রহ্মচারিণীরা ঐ সকল কেন্দ্রে মেয়েদের শিক্ষার ভার নেবে। পুরান, ইতিহাস,
গৃহকার্য, শিল্প, ঘরকন্নার নিয়ম ও আদর্শ চরিত্র গঠনের সহায়ক নীতিগুলি বর্তমান-
বিজ্ঞানের সহায়তায় শিক্ষা দিতে হবে। ছাত্রীদের ধর্মপরায়ন ও নীতিপরায়ণ করতে হবে।
কালে যাতে তারা ভাল গিন্নি তৈরি হয়, তাই করতে হবে। এই সকল মেয়েদের সন্তানসন্ততিগণ
পরে ঐ সকল বিষয়ে আরও উন্নতি লাভ করতে পারবে। যাদের মা শিক্ষিতা ও নীতিপরায়ণা হন,
তাদের ঘরেই বড়লোক জন্মায়। ... মেয়েদের আগে তুলতে হবে, জনসাধারণকে জাগাতে হবে; তবে
তো দেশের কল্যাণ।
ধর্ম, শিক্ষা, বিজ্ঞান, ঘরকন্না,
রন্ধন, সেলাই, শরীরপালন এ- সব বিষয়ে স্থুল মর্মগুলোই মেয়েদের শেখানো উচিত।
......সব বিষয়ে চোখ ফুটিয়ে দিতে হবে। আদর্শ নারী চরিত্রগুলি ছাত্রীদের সামনে
সর্বদা ধরে উচ্চ ত্যাগরূপ ব্রতে তাদের অনুরাগ জন্মে দিতে হবে। সীতা, সাবিত্রী,
দময়ন্তী, লীলাবতী, খনা, মীরা এদের জীবনচরিত্র মেয়েদের বুঝিয়ে দিয়ে তাদের নিজেদের
জীবন ঐরূপে গঠন করতে হবে।
.........বৈদিক যুগে, উপনিষদের
যুগে দেখতে পাব- মৈত্রেয়ী গার্গী প্রভৃতি প্রাতঃস্মরণীয়া মেয়েরা ব্রম্মবিচারে
ঋষিস্থানীয়া হয়ে রয়েছেন। হাজার বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের সভায় গার্গী সগর্বে যাজ্ঞবল্ককে
ব্রম্মবিচারে আহবান করেছিলেন।.........মেয়েদের পূজা করেই সব সব জাত বড় হয়েছে। যে
দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সে দেশ সে জাত কখনও বড় হতে পারেনি, কস্নিন কালে
পারবেও না। তোদের জাতের যে এত অধঃপতন ঘটেছে, তার প্রধান কারণ এইসব শক্তিমূর্তির
অবমাননা করা। .........যেখানে স্ত্রীলোকের আদর নেই, স্ত্রীলোকেরা নিরানন্দে
অবস্থান করে, সে সংসারে- সে দেশের কখন উন্নতির আশা নেই। এজন্য এদের আগে তুলতে হবে-
এদের জন্য আদর্শ মঠ স্থাপন করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে স্বামীজি
যে স্বপ্ন দেখেছিলেন নারীজাতির উন্নয়ন সম্পর্কে তা বাস্তবায়নে বর্তমান তরুণদের
এগিয়ে আসা উচিত নতুবা একটি আধুনিক ভারত গঠন চির স্বপ্নই থেকে যাবে।
+++---অর্জুন রুদ্র---+++

No comments:
Post a Comment