Friday, July 12, 2013

নটরাজ শিব



নটরাজ শিবঃ

           সতীশোকাতুর শিবের তাণ্ডব নৃত্যের কথা আমরা সবাই জানি। শোকের বিহবল অভিব্যাক্তিকে এমন উদ্দন্ড নৃত্য তিন নেচেছিলেন, যাতে সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল সমগ্র বিশ্বজগৎ। তদীয় নৃত্যের রুদ্রতাল প্রলয়ে প্রকাশ। কিন্তু এর একটি শান্ত ছন্দও আছে, যা জীবের চিত্ত বিনোদন করে। নৃত্য তদীয় স্বভাব, নাদময় সঙ্গীত তদীয় স্বরূপ। ডমরুর ডিডিম ডিডিম তালে, কণ্ঠবাদ্যের ববম ববম ধ্বনিতে বেজে ওঠে প্রনবাত্মিক মোহন ব্রহ্মসঙ্গীত, আর সেই সঙ্গীতের ছন্দে ছন্দে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই জেগে ওঠে নৃত্যকলার অপরুপ চারু চরণবিভঙ্গমা। নৃত্য, গীত, বাদ্য এ তিন তৌর্যের সহযোগে হয় নাটক। কথিত হয় এ নাট্যশাস্ত্রের আদি প্রবক্তা শিব। তিনি প্রথমে ব্রহ্মাকে এ পঞ্চমবেদ নাট্যবেদ উপদেশ করেছিলেন। ব্রহ্মা ভরতকে বলেন এবং ভরত তা মর্ত্যে প্রচার করেন। ভরতমুনির নাট্যসূত্র প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ নাট্যশাস্ত্র।
                     স্কন্দপুরানে নটরাজ শিবের চারি মাসব্যাপী এক নৃত্যাভিনয়ের কথা উল্লেখিত। আষাঢ় মাসের চতুর্দশী তিথিতে আরম্ভ হয়ে কার্ত্তিক মাসের শুক্লা চতুর্দশী পর্যন্ত ঐ নৃত্য অবিরাম চলেছিল। সেই নৃত্যবাসরে উপস্থিত ছিলেন সকল দেবগণই। ঋষিগণ, সিদ্ধগণ, যক্ষগণ, পিশাচগণ, গুহ্যকগন,সাদ্য ও বসুগণও দর্শকের গ্যালারী পূর্ণ করেছিলেন।ছয় রাগ এবং ছত্রিশ রাগিনীর উপস্থিতির কথাও আছে। ঐ নৃত্যকালে মৃদঙ্গ বাজিয়েছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা, তাল দিয়েছিলেন কেশব, বংশী বাদকরূপে ছিলেন ইন্দ্র; অগ্নি, অশ্বিনীকুমারদ্বয়, চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি দেবতাও নিস্ক্রিয় ছিলেন না। পাগলাকে নাচাবার জন্য কেউ পনব, কেউ উপাঙ্গ, কেউ ঘণ্টা, কেউ বা শূর্প বাদ্যও বাজিয়েছিলেন। এ সব বাদ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল গন্ধর্বগনের কোকিলকণ্ঠবিনিঃসৃত মধুর সঙ্গীত। বেশ সেজেগুজেই নৃত্য করেছিলেন শঙ্কর। সর্পগণ হয়েছিল তার মুকুটভূষণ, সর্বাঙ্গে লেপন করেছিলেন তিনি শুভ্রজ্জ্বল ভস্মরাগ, পরিধান করেছিলেন নানাবিধ ভূষণ। নৃত্যের আসরটি বেশ জমজমাট হয়েছিল, তাতে সন্দেহ কি?
                   কেবল নৃত্যে নহে, সঙ্গীতেও শিব সর্বলোকশ্রেষ্ঠ। তদীয় কণ্ঠসঙ্গীত শ্রবণে  স্বয়ং লোকপাল বিষ্ণুও পাদপর্যন্ত বিগলিত হয়েছিলেন। সে বিগলিত বিষ্ণুপাদসত্তা ব্রহ্মা স্বীয় কমণ্ডলুতে ধারন করেন। এই দ্রবীভূত বিষ্ণুপাদই গঙ্গানদী নামে খ্যাতা।

                                                                      ------ স্বামী নির্মলানন্দ

(Collected by Yudhistir Rudra)


<<<<<>>>>>>

No comments:

Post a Comment