Tuesday, July 9, 2013

তর্পণ কেন করা হয়?



তর্পণ কেন করা হয়?

           আত্মা যে অমর, তার বড় প্রমাণ হল এই মহালয়া। পিতা-মাতা বা আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুর পর শ্মশানে পুড়িয়ে দিলেই সব মিটে গেল, এ ধারণাটা একেবারেই ঠিক নয়। মহালয়া হল পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর সব ক্ষেত্রেই মহালয়ার তর্পণ বাধ্যতামূলক হয়ে এসেছে। স্মরণাতীত কাল থেকেই আমরা এটা পালন হয়ে আসতে দেখেছি। এতে কোনও জাতিভেদ নেই। প্রথমত, মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হয়। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে আমাদের উদারতাই প্রকাশ পায়। একজন মানুষ কতখানি কর্তব্যপরায়ণ, তারও বড় প্রমাণ এই মহালয়া।
           এবার একটু ব্যাখ্যায় যাওয়া যাক। মৃত্যুর পর পিতৃপুরুষরা বাস করেন প্রেতলোকে। বছরের একটি সময়ই তারা মর্ত্যে আসেন কিছু পাওয়ার আশায়। জীবিতকালে তারা সন্তান সন্ততির জন্য যা কিছু রেখে যান, তা ভোগ করার সুযোগ তাদের হয় না। কিন্তু তারা আশা করেন, বছরের একটি দিন অন্তত সন্তান সন্ততির সেবা পাবেন। তারা যে অতীতকে ভুলে যায়নি, তাও উপলব্ধি করতে পারবেন। প্রেতলোক থেকে মর্ত্যলোকে এসে পিতৃপুরুষরা থাকেন কালীপূজো পর্যন্ত। এর মধ্যে সর্বসম্মতভাবে মহালয়ার দিনটিকেই তর্পণের দিন হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ঐ দিন পিতৃপুরুষকে জলদান করাটাই  শাস্ত্রসম্মত, এমনকি বিজ্ঞানসম্মতও। সাধারন নিয়মে কেবল জলদান করলেই চলে। তবে যার সামর্থ্য আছে, সে চন্দন এবং তিল দিতে পারে। কেউ কেউ ভোজ্যও দিয়ে থাকে। যেমন, চাল, ডাল, কলা ইত্যাদি।
           ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধশেষে তর্পণ করেছিলেন। শ্রীরামচন্দ্র বনবাসে যাওয়ার পথেও করেছিলেন তর্পণ। গঙ্গা হল পবিত্র। তাই সকলে চেষ্টা করেন গঙ্গায় গিয়ে তর্পণ করতে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, বাড়িতেও তর্পণ করা যায়। অনেকে তো প্রত্যেকদিনই তর্পণ করে থাকে। এটা পিতৃপুরুষের প্রতি সম্মান, ভালবাসার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আর, সেই ভালবাসা না পেলে পিতৃপুরুষ রীতিমত রুষ্ট হন। তারা যেমন সন্তানসন্ততির কাছ থেকে জল পেলে শান্তি পান, তৃপ্তি বোধ করেন, ঠিক তেমনই জল না পেলে অভিসম্পাত করতে করতে ফের প্রেতলোকে ফিরে যান। জলদান করা মানে যে কেবল আত্মশুদ্ধি তাও নয়। এর মাধ্যমে পৃথিবীর সকলকে সেবাও করা যায়।
                                                              ------- মুরারীমোহন বেদান্তাদিতীর্থ শাস্ত্রী
(Collected by Yudhistir Rudra)

<<<<< >>>>>     

No comments:

Post a Comment