Thursday, July 4, 2013

বিষ্ণুর বাহন কেন গরুড়?



বিষ্ণুর বাহন কেন গরুড়?

         গরুড় নামধেয় কোনও পক্ষিবিশেষ বর্তমানে আমাদের স্থুল দৃষ্টির বিষয়ীভূত নয়। সুতরাং, জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কোন আলোচনা ও যুক্তি প্রদর্শন এক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কিন্তু তথাপি গরুড় সম্বন্ধে কিছু না বলে আমরা ক্ষান্ত হতে পারি না। কারণ, এই মহাত্মার চরিত্রকথা অতি উপাদেয় ও লোকশিক্ষামূলক।
             বেদে বিষ্ণুকে বলা হয়েছে সুপর্ণ এবং গরুত্মান। পুরাণকারেরা  এদুটি শব্দ উপজীব্য করেই সম্ভবতঃ বিষ্ণুর বাহনরূপে নির্দিষ্ট করেছেন প্রাগুক্ত পক্ষিবরকে। বেদোক্ত তার্ক্ষ্য পক্ষীর সঙ্গেও বিষ্ণুবাহন গরুড়ের বলবীর্য ও চেষ্টার আশ্চর্য সাদৃশ্য আছে। তার্ক্ষ্য বা শ্যেন বা সুপর্ণ স্বর্গ থেকে সোম আনয়ন করেছিল। তখন ঘোরতর যুদ্ধ হয়।  তার্ক্ষ্য- শত্রু-পরাভবকারী, কিন্তু স্বয়ং অপরাজেয়। জননী বিনতাকে দাস্যবৃত্তি থেকে সমুদ্ধারের জন্য পুরাণোক্ত গরুড় পক্ষীও স্বর্গ থেকে অমৃত আনয়ন করেছিলেন। তৎকালে ইন্দ্রাদি দেবতার সঙ্গে তার তুমুল যুদ্ধ হয়। দেবগন তার সঙ্গে বিজয়ী হতে পারেন না। নিরুপায় ইন্দ্র অবশেষে নিক্ষেপ করেন বজ্র-তদীয় প্রসিদ্ধ অব্যর্থ অস্ত্র। উত্তরে শুধু হাস্য করেন মহাবল গরুড়। পরে বজ্রেরই সম্মান রক্ষার জন্য বিসর্জন করেন নিজে একটি মাত্র পর্ণ বা পালক।
            শক্তি ও ভক্তি-উভয়ের সমন্বয়ে গরুড়চরিত্র। তার মত মাতৃভক্ত জগতে সুদুর্লভ। নির্লোভতার দিক থেকেও তার চরিত্র অনুপম। নিজ ভুজবিক্রমে হস্তগত হয়েছে অমৃতভাণ্ড, তত্রাচ অমৃতে নেই তার বিন্দু মাত্র লোভ বা আসক্তি। গরুড়ের এই লোকোত্তর চরিত্র বিশ্বপালক বিষ্ণুকে পর্যন্ত আকৃষ্ট করে। তিনি প্রসন্ন হয়ে বলেন- বর গ্রহন কর। গরুড় চাইলেন অমৃত পান ব্যতীতই অমর হতে এবং সর্বদা বিষ্ণুর উপরে থাকতে। বিষ্ণু স্বীকার করেন ভক্তের এই প্রার্থনা। নিজ অভীষ্ট পূর্ণ হলে গরুড়ও আহবান করেন বিষ্ণুকে অভিলষিত বর গ্রহণে। বিষ্ণু বলেন- তবে তুমি আমার বাহন হও। গরুড় উত্তরে বলেন তথাস্তু। বরদান ছলে ভগবান ভক্তকে স্থান দেন নিজেরও উপরে স্বীয় দিব্য রথের সর্বোচ্চ ধ্বজ্জায়, স্বয়ং খ্যাত হন গরুড়ধ্বজ নামে এবং একই প্রণালীতে ভক্তও বিকিয়ে দেন নিজেকে ভগবানের রক্তরাঙ্গা শ্রীচরণকমলে তার নিত্যদাস রূপে। ভক্ত ও ভগবানের পরস্পরের এই বরদান - লীলা আজও আমাদের অন্তরে গভীর পুলক সঞ্চার করে। গরুড়ের ভক্ত্যুজ্জ্বল আদর্শ অনুসরন পূর্বক আমাদেরও অকুণ্ঠ কণ্ঠে প্রার্থনা করতে ইচ্ছা হয় - 
             যথা ত্বং সংপুটকরঃ সততং নতস্কন্ধরঃ।
             তথৈব পুরতো বিষ্ণো স্ত্বৎপ্রসাদাদ ভবাম্যহম।
                          হে ভক্তবর গরুড়! তুমি যেমন সর্বদা ভগবান বিষ্ণুর সমীপে যুক্তকর ও নতশির, তোমার প্রসাদে আমরাও যেন ঠিক তেমনটি হতে পারি।
-          স্বামী নির্মলানন্দ

( Collected by Yudhistir Rudra )

No comments:

Post a Comment