Thursday, October 24, 2013

গীতার ধর্মসমন্বয়



গীতার ধর্মসমন্বয়ঃ

গীতা সার্বজনীন ধমগ্রন্থ, গীতা সকল সম্প্রদায়ের, সকল শ্রেণীর ধর্মগ্রন্থ হওয়ার যোগ্য। গীতা শাস্রে কোন গোঁড়ামি বা সংকীর্ণতা স্থান পায়নি। গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের একাদশ শ্লোকে শ্রীভগবান বলেছেনঃ
            যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তৈথব ভজাম্যহম।
            মম বরত্নানুবরতন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ।।

হে পার্থ, যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে, আমি তাকে সে ভাবেই অনুগ্রহ করি। মনুষ্যগণ সর্বপ্রকারে আমার পথেরই অনুসরণ করে; (অর্থাৎ যে পথেই অনুসরণ করুক না কেন, সকল পথে আমাতেই পৌছাতে পারে।
শ্রীরামকৃষ্ণ বিভিন্ন ধর্মমতের বিভিন্ন প্রণালী অবলম্বনে সিদ্ধিলাভ করে নিজ জীবনেই এই মহৎ উদার বানীর সত্যতা প্রমান করেছিলেন। তিনি ছিলেন মহাসমন্নয়াচারজ-বিভিন্ন ধর্মপথ সম্বন্ধে তিনি বলেছেনঃ
(১)আমি বলি, সকলেই তাকে ডাকছে। দ্বেষাদ্বেষীর দরকার নাই। কেউ বলছে সাকার, কেউ বলছে নিরাকার। আমি বলি যার সাকারে বিশ্বাস, সে সাকারই চিন্তা করুক, যার নিরাকারে বিশ্বাস, সে নিরাকারই চিন্তা করুক। তবে এই বলা যে, মতুয়ার (dogmatism) বুদ্ধি ভাল নয়,- অর্থাৎ আমার ধর্ম ঠিক আর সকলের ভুল। 
(২)কি জান? দেশ-কাল-পাত্র ভেদে ঈশ্বর নানা ধর্ম করেছেন। কিন্তু সব মতই পথ, মত কিছু ঈশ্বর নয়। তবে আন্তরিক ভক্তি করে একটা মত আশ্রয় করলে, তার কাছে পৌঁছান যায়।
গীতার ৭ম অধ্যায়ের ২১শ শ্লোকে আছেঃ
                  যো যো জাং জাং তনুং ভক্তঃ স্রদ্ধয়ারচিতুমিচ্ছতি।
                  তস্য তশ্যচলাং স্রদ্ধাং তামেব বিদ্ধাম্যহম।।  
যে যে (সকাম) ভক্ত স্রদ্ধা সহকারে যে যে দেবমূর্তি অর্চনা করতে ইচ্ছা করে, সেই সেই দেবমূর্তিতে আমি তাদেরকে অচলা ভক্তি প্রদান করি।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, যদি বল কোন মূর্তির চিন্তা করব; যে মূর্তি ভাল লাগে তারই ধ্যান করবে। কিন্তু জানবে যে সবই এক।
কারো ওপর বিদ্বেষ করতে নেই। শিব, কালী, হরি- সবই একেরই ভিন্ন রুপ। যে এক করেছে সেই ধন্য।
৯ম অধ্যায়ের ২৩শ শ্লোকে উক্ত হয়েছেঃ
                  যেহপ্যেন্য দেবতাভক্তা যযন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ।
                 তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্য বিধি পূর্বকম।।
হে কৌন্তেয়, যে সকল ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে অন্য দেবতার উপাসনা করেন, তারাও না জেনে আমারই উপাসনা করেন।
এইরুপ সার্বজনীনতা ও উদারতা অন্যত্র দুর্লভ। ভগবানের অসংখ্য নাম ও অসংখ্য রুপ। তার যেকোনো একটি নাম ও রুপ নিষ্ঠার সাথে সাধনা করলে মোক্ষলাভ হয়। অপরের ইষ্টকে স্রদ্ধা করা ইষ্টনিষ্ঠার একটি প্রধান সাধন। যেহেতু একই ঈশ্বর সব দেবদেবী মূর্তিতে বিদ্যমান সেজন্য অপরের ইষ্টকে অস্রদ্ধা করা অনুচিত। রুচির বৈচিত্র্যহেতু ঋজু, কুটিল যে পথে মানুষ চলুক না কেন, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকলে সাধকের ঈশ্বরলাভ হবেই। শিবমহিম্নঃ স্ত্রোত্রে ও আমরা সে কথা পাইঃ
                 রুচীনাং বৈচিত্র্যাদৄজু কুটিল নানা পথজুযাং।
                  নৄণামেকো গম্যস্তমসি পয়সামর্ণব ইব।।
বিভিন্ন পথ দিয়ে যেমন জল প্রবাহ সমুদ্রে পৌছয়, তেমনি সকল মানুষ তোমারই কাছে পৌছয়। ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ তাই বলতেন, যত মত তত পথ

উৎসঃ উত্তিষ্ঠত।


<<<<<<<<>>>>>>>> 


              

No comments:

Post a Comment